উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩/০৯/২০২২ ১২:১১ পিএম

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূণ্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো মাদক-চোরচালানের ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যত্রতত্র বেরিয়ে ঘোরাঘুরি করলেও তাদের ক্যাম্পে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই বাংলাদেশিদের। স্থানীয়দের প্রবেশ ঠেকিয়ে পুরো ক্যাম্পকে মাদক ও চোরাচালানের রাজ্য বানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

স্থানীয়রা বলছেন, এই ক্যাম্পের বাংলাদেশের অংশে বিশেষ ‘সুরক্ষা’ থাকলেও মিয়ানমার অংশে রয়েছে অবাধ চলাচল। যার ফলে এই ক্যাম্প হয়ে উঠেছে মাদক পাচার ও স্বর্ণসহ চোরাচালানের ‘হটস্পট’।

সীমান্তের খবর সংগ্রহে যাওয়া গণমাধ্যম কর্মীদের শূণ্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্মের নালিশ করেন স্থানীয়রা।

তুমব্রু বাজারের পাশের এলাকার বাসিন্দা মো. আলী হোসেন জানান, শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প দিয়ে ইয়াবা, স্বর্ণের বার, সিগারেটসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য বাংলাদেশে পাচার হয়। বিভিন্ন সময় এসব চালান ধরা পড়েছে।

স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৯০ শতাংশ বাড়িতেই থাকে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবা ও দামি সিগারেটসহ নানা চোরাই পণ্য! অনেক ঘরে স্বর্ণের বারও থাকতে পারে।’

ক্যাম্প লাগোয়া তুমব্রু উত্তরপাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘ কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও মিয়ানমারে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। তবে মিয়ানমার বর্ডারগার্ড পুলিশকে দিতে হয় জনপ্রতি পাঁচ’শ টাকা! এর বিপরীতে একটি কার্ড দেয়া হয়। এটাকে ‘পাস’ বলে তারা। এই ‘পাস’ নিয়ে সকালে গিয়ে বিকালে ফিরে আসতে হয়। না ফিরলে বিপদ হতে পারে। এভাবে মিয়ানমারে গিয়ে মগদের কাছ থেকে ইয়াবা, স্বর্ণ, সিগারেটসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য নিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। এসব চোরাচালান পাচারে বিজিপির সাথে সে দেশের মগদের ‘চুক্তি’ রয়েছে। এভাবে প্রায়ই সময় এই সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বড় বড় ইয়াবার চালান।

ক্যাম্প থেকে বের হয়ে চোরা চালানের বস্তা নিয়ে দৌঁড়ে বাংলাদেশে ঢুকে যাচ্ছে এক কিশোর
ক্যাম্প থেকে বের হয়ে চোরা চালানের বস্তা নিয়ে দৌঁড়ে বাংলাদেশে ঢুকে যাচ্ছে এক কিশোর

উত্তর পাড়ার ওই ব্যক্তি আরও জানান, পাচার হয়ে আসা ইয়াবাসহ অধিকাংশ চালান নানা সুক্ষ্ম কৌশলে হাত বদলে চলে যায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

স্থানীয় একাধিক বাংলাদেশি নাগরিকরা জানান, শূন্য রেখার এই ক্যাম্পে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘আল ইয়াকিন’র দলভুক্ত অনেকে রয়েছেন। এমনকি এই দুর্ধর্ষ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও জড়িত। মূলত ‘আল ইয়াকিন’ সদস্য ও ক্যাম্পের নেতৃপর্যায়ের রোহিঙ্গাদের সমন্বয়ে এই ক্যাম্প হয়ে উঠেছে মাদক-চোরাচালানের ‘হটস্পট’!

গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দেখা গেছে, ক্যাম্পের ভেতর থেকে বের হয়ে বড় একটি সিগারেটের কার্টন নিয়ে ক্যাম্পের উত্তর পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে দুই যুবক। ক্যামেরা দেখা মাত্র চম্পট দেয়। স্থানীয়রা বলেছেন, সিগারেটের কাটনের ভেতর করে এভাবে ইয়াবাও পাচার হয়!

স্থানীয় বাংলাদেশিরা দাবি করেছেন, ইয়াবাসহ চোরাচালান করে এই ক্যাম্পের অনেকে বহু অর্থের মালিক। তারা সেখানে বিলাসী জীবনযাপন করে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এই রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দীল মোহাম্মদ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে কড়াকড়ি থাকার কারণে ওপারে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে চুরি কেউ কেউ যেতে পারে।’

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) ৩৪ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদি হোসাইন বলেন, ‘এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের চোরাচালানের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এই বিষয়ে স্থানীয়রাও আমাদের অভিযোগ জানায় না। তারপরও আমরা বিষয়টি দেখবো। যদি তা হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুত্র: সিভয়েস

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির বুলেটপ্রুফ গাড়িতে টহল

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্টে মরিয়া হয়ে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আর চোরাচালান বন্ধে ...